আনন্দমোহন রক্ষিত : সমকালের সমাজ সচেতন কবি

কবি আনন্দমোহন রক্ষিতকে চিনি অনেক বছর ধরে। তিনি আমাদের কাছে বিশিষ্ট তাঁর সৃষ্টির জন্য, তাঁর কবিতার জন্য। তাঁর কবিতায় আমরা পাই দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালির বীরত্বগাথা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা, অত্যাচার, নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর ঘৃণা এবং বাঙালির অর্জন নিয়ে বহু সাহিত্য রচিত হয়েছে। আনন্দমোহন রক্ষিত সেই অনেক গুণী লেখকের একজন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তাঁর কিছু কিছু কবিতা এক কথায় অনন্য। বলা যায় পাঠকের কাছে সমান অনুপ্রেরণাদায়ী। আনন্দমোহন রক্ষিত সমকালের সমাজ সচেতন কবি। তার চারপাশের অভিজ্ঞতা, নাগরিক জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, রোমান্টিকতা, প্রেম, নৈসর্গিকতা, শাসন-শোষণ আর শোষকগোষ্ঠীর প্রতি ঘৃণা ও তীব্র ক্ষোভ এসব নিয়েই তিনি লিখেছেন প্রচুর কবিতা। তাঁর কবিতায় আমরা প্রত্যক্ষ করি প্রকৃতির প্রতি গভীর অনুরাগ ও আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ। সমালোচকরা মনে করেন, তাঁর কবিতার সহজবোধ্যতাই পাঠকপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।
সত্তর দশকের আলোচিত কবি অধ্যাপক আনন্দমোহন রক্ষিতের জন্ম ১৯৫০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে। পিতা কবিয়াল ফণীন্দ্র লাল রক্ষিত ও মাতা চারুবালা দেবীর পাঁচ সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। বড় ভাই গৌরাঙ্গ মোহন রক্ষিতের আগ্রহ, উৎসাহ ও আর্থিক সহযোগিতায় তিনি উত্তর পদুয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে মাধ্যমিক, চট্টগ্রাম সরকারি ট্রেনিং কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, সরকারি কলেজ অব এডুকেশনস’ থেকে বি,এ, ইন এডুকেশন ডিগ্রী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম,এ, ডিগ্রী অর্জন করেন। তাঁর লেখালেখি শুরু হয় ষাট দশকের শেষ দিকে। তাঁর প্রথম লেখা – ‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও অনুন্নত সিলেবাস প্রথা’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে দৈনিক আজাদীতে। কবি শামসুর রাহমান ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘দুই বাংলার ভালোবাসার কবিতা’, কবি শ্যামল কান্তি দাশ ও বিমল গুহ সম্পাদিত ‘হাজার কবির হাজার কবিতা’সহ অনেক সংকলনে তাঁর কবিতা স্থান পেয়েছে। ইতোমধ্যে তাঁর পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে; সেগুলো হলো- ঢালো বিষ ঢালো অমৃত (১৯৯৭), তুমিও ফেরালে চোখ (২০০১), মানুষের দ্রোহ মানুষ (২০০৬), অনুরাগে ভেজা চোখ (২০০৯), চেরাগির অপূর্ব আলোয় (২০২০)। এছাড়াও শোণিত গালিচা পাতা জনপদ (১৯৭৪) এবং নবান্ন (২০১২) তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।
পেশাগত জীবনে কবি অধ্যাপক আনন্দমোহন রক্ষিত একজন কলেজ শিক্ষক। রাউজান ডিগ্রী কলেজ থেকে ২০১১ সালে উপাধ্যক্ষ হিশেবে অবসর গ্রহণ করেন। মাঝে কিছু সময় তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিশেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
কবি আনন্দমোহন রক্ষিত লেখালেখির স্বীকৃতিস্বরূপ বেশ কিছু সম্মাননাও পেয়েছেন। ১৯৭৭ সালে কর্ণফুলি সাহিত্য পুরষ্কার, ২০০৭ সালে জগৎপুর আশ্রম চট্টগ্রাম থেকে শ্রদ্ধা ও স্মৃতি স্মারক, ২০০৯ সালে কবিয়াল ফণী বড়–য়া স্মৃতিপদক, ২০১৩ সালে অবসর সাহিত্য সম্মাননা পদক এবং ২০১৯ সালে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবৃত্তি সংগঠন ‘শৃন্বন্তু’ কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক কবিতা সম্মেলনে সম্মাননা স্মারক লাভ করেন। এছাড়াও কবি আনন্দমোহন রক্ষিত বাংলা একাডেমি, চট্টগ্রাম একাডেমিসহ বিভিন্ন সাহিত্য-সংস্কৃতি, সামাজিক ও সেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে তিনি জড়িত।

Showing all 5 results

Show sidebar