সেলিনা হোসেন : প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক
সেলিনা হোসেন (জন্ম ১৪ জুন ১৯৪৭)[১] বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক। তার উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়েছে সমকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সংকটের সামগ্রিকতা। বাঙালির অহংকার ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তাঁর লেখায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তার গল্প উপন্যাস ইংরেজি, রুশ, মেলে এবং কানাড়ী ভাষায় অনূদিত হয়েছে।[৩] ২০১৪ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবে দুই বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি। [৪]

জন্ম ও শিক্ষা জীবন
সেলিনা হোসেন ১৯৪৭ সালের ১৪ জুন রাজশাহী শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস লক্ষ্মীপুর জেলার হাজিরপাড়া গ্রামে। বাবা এ কে মোশাররফ হোসেনের আদিবাড়ি নোয়াখালি হলেও চাকরিসূত্রে বগুড়া ও পরে রাজশাহী থেকেছেন দীর্ঘকাল; কাজেই সেলিনাকে একেবারে ছেলেবেলায় নোয়াখালিতে বেশিদিন থাকতে হয়নি। সেলিনা হোসেনের মায়ের নাম মরিয়ম-উন-নিসা বকুল। মোশাররফ-মরিয়ামুন্ননেছা দম্পতির সব মিলিয়ে নয় ছেলেমেয়ে। সেলিনা ভাইবোনদের মধ্যে চতুর্থ।

শিক্ষাজীবন
সেলিনা ১৯৫৪ সালে বগুড়ার লতিফপুর প্রাইমারি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৫৯ সালে রাজশাহীর নাথ গালর্স স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে তিনি এখান থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালে রাজশাহী মহিলা কলেজে ভর্তি হন। কলেজ জীবন শেষ করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে বি.এ. অনার্স এবং ১৯৬৮ সালে এম.এ. পাস করেন।

কর্মজীবন
সেলিনা ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমির গবেষণা সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এর পূর্বে তিনি বিভিন্ন পত্রিকাতে উপসম্পাদকীয়তে নিয়মিত লিখতেন। কর্মরত অবস্থায় তিনি বাংলা একাডেমির ‘অভিধান প্রকল্প’, ‘বিজ্ঞান বিশ্বকোষ প্রকল্প’, ‘বিখ্যাত লেখকদের রচনাবলী প্রকাশ’, ‘লেখক অভিধান’, ‘চরিতাভিধান’ এবং ‘একশত এক সিরিজের’ গ্রন্থগুলো প্রকাশনার দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ২০ বছরেরও বেশি সময় ‘ধান শালিকের দেশ’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমির প্রথম মহিলা পরিচালক হন। ২০০৪ সালের ১৪ জুন চাকুরি থেকে অবসর নেন।[৫] তার প্রথম গল্পগ্রন্থ উৎস থেকে নিরন্তর প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। তার মোট উপন্যাসের সংখ্যা ২১টি, গল্প গ্রন্থ ৭টি এবং প্রবন্ধের গ্রন্থ ৪টি।

গ্রন্থতালিকা
উপন্যাস
উত্তর সারথি (১৯৭১)
জলোচ্ছ্বাস (১৯৭৩)১ম উপন্যাস[৬]
জ্যোস্নায় সূর্যজ্বালা (১৯৭৩)
হাঙর নদী গ্রেনেড (১৯৭৬)
মগ্ন-চৈতন্যে শিস (১৯৭৯)
যাপিত জীবন (১৯৮১)
নীল ময়ূরের যৌবন (১৯৮২)
পদশব্দ(১৯৮২)
চাঁদবেনে(১৯৮৪)
পোকা মাকড়ের ঘরবসতি(১৯৮৬)
নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি(১৯৮৭)
ক্ষরণ(১৯৮৮)
কাঁটাতারে প্রজাপতি(১৯৮৯)
খুন ও ভালোবাসা(১৯৯০)
কালকেতু ও ফুল্লরা(১৯৯২)
ভালোবাসা প্রীতিলতা(১৯৯২)
টানাপোড়েন(১৯৯৪)
গায়ত্রী সন্ধ্যা-১ম খ-(১৯৯৪)
গায়ত্রী সন্ধ্যা-২য় খ-(১৯৯৫)
গায়ত্রী সন্ধ্যা-৩য় খ-(১৯৯৬)
দীপাম্বিতা(১৯৯৭)
যুদ্ধ(১৯৯৮)
লারা(২০০০)
কাঠ কয়লার ছবি(২০০১)
মোহিনীর বিয়ে(২০০১)
আণবিক আঁধার(২০০৩)
ঘুমকাতুরে ঈশ্বর(২০০৪)
মর্গের নীল পাখি(২০০৫)
অপেক্ষা(২০০৭)
দিনের রশিতে গিটঠু(২০০৭)
মাটি ও শস্যের বুনন(২০০৭)
পূর্ণছবির মগ্নতা(২০০৮)
ভূমি ও কুসুম(২০১০)
যমুনা নদীর মুশায়রা(২০১১)
আগস্টের একরাত(২০১৩)[৭]
গেরিলা ও বীরাঙ্গনা (২০১৪)
দিনকালের কাঠখড়(২০১৫)
গল্প
উৎস থেকে নিরন্তর(১৯৬৯)
জলবতী মেঘের বাতাস(১৯৭৫)
খোল করতাল(১৯৮২)
পরজন্ম(১৯৮৬)
মানুষটি(১৯৯৩)
মতিজানের মেয়েরা(১৯৯৫)
অনূঢ়া পূরণিমা(২০০৮)
সখিনার চন্দ্রকলা(২০০৮)
একালের পান্তাবুড়ি(২০০২)
অবেলার দিনক্ষণ(২০০৯)
নারীর রূপকথা(২০০৯)
নুনপান্তার গড়াগড়ি(২০১৪)
মৃত্যুর নীলপদ্ম(২০১৫)
কবিতা
বর্ণমালার গল্প
শিশু-কিশোর সাহিত্য
সাগর(১৯৯১)
বাংলা একাডেমী গল্পে বর্ণমালা(১৯৯৪)
কাকতাড়–ুয়া(১৯৯৬)
বর্ণমালার গল্প(১৯৯৭)
আকাশ পরী(২০০১)
অন্যরকম যাওা(২০০১)
যখন বৃষ্টি নামে(২০০২)
জ্যোৎস্নার রঙে আঁকা ছবি(২০০২)
মেয়রের গাড়ি(২০০৩)
মিহিরুনের বন্ধুরা(২০০৪)
রংধনু (সম্পাদনা) (২০০৪)
এক রুপোলি নদী(২০০৫)
গল্পটা শেষ হয় না(২০০৬)
বায়াান্নো থেকে একাত্তর(২০০৬)
চাঁদের বুড়ির পান্তা ইলিশ(২০০৮)
মুক্তিযোদ্ধারা(২০০৯)
সোনারতরীর ছোটমণিরা(২০০৯)
পুটুসপুটুসের জন্মদিন(২০১০)
নীলটুনির বন্ধু(২০১০)
কুড়কুড়ির মুক্তিযুদ্ধ(২০১১)
ফুলকলি প্রধানমন্ত্রী হবে(২০১১)
হরতালের ভূতবাবা(২০১৪)
প্রবন্ধ
স্বদেশে পরবাসী(১৯৮৫)
ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন(১৯৮৫)
একাত্তরের ঢাকা(১৯৮৯)
নির্ভয় করো হে(১৯৯৮)
মুক্ত করো ভয়(২০০০)
ঘরগেরস্থির রাজনীতি(২০০৮)
নিজেরে করো জয়(২০০৮)
প্রিয় মুখের রেখা(২০১০)
শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ(২০১০)
পথ চলাতেই আনন্দ(২০১৪)
সম্পাদনা
নারীর ক্ষমতায়নঃ রাজনীতি ও আন্দোলন (যৌথ) (২০০৩)
ইবসেনের নারী(২০০৬)
ইবসেনের নাটক ও কবিতা(২০০৬)
জেন্ডার বিশ্বকোষ (যৌথ) (২০০৬)
বাংলাদেশ নারী ও সমাজ (যৌথ) (২০০৭)
জেন্ডার ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন (যৌথ) (২০০৭)
সাহিত্যে নারীর জীবন ও পরিসর (যৌথ) (২০০৭)
জেন্ডার আলোকে সংস্কৃতি (যৌথ) (২০০৭)
পুরুষতন্ত্র নারী ও শিক্ষা (যৌথ) (২০০৭)
দক্ষিণ এশিয়ার নারীবাদী গল্প(যৌথ) (২০০৮)
জেন্ডার ও উন্নয়ন কোষ(২০০৯)
ধান শালিকের দেশ (বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত শিশু-কিশোর পত্রিকা, ২২ বছর)
ছোটদের অভিধান (বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত) (অন্যতম সম্পাদক)
ইংরেজিতে অনূদিত উপন্যাস
ঝবষবপঃবফ ঝযড়ৎঃ ঝঃড়ৎরবং ড়ভ ঝবষরহধ ঐড়ংংধরহ (২০০৭). চঁনষরংযবফ নু ইধহমষধ অপধফবসু.
ঞযব ঝযধৎশ ঞযব জরাবৎ ্ ঞযব এৎবহধফব(১৯৮৭) চঁনষরংযবফ নু ইধহমষধ অপধফবসু. ঞৎধহংষধঃবফ নু অনবফরহ কধফবৎ.
ডধৎঢ় ধহফ ডড়ড়ভ (১৯৯৯). ‘টানাপোড়েন’ উপন্যাসের অনুবাদ। চঁনষরংযবফ নু ইধহমষধ অপধফবসু.
চষঁসবফ চবধপড়পশ (১ংঃ চঁনষরংযবফ -১৯৮৩. ২হফ ঢ়ঁনষরংযবফ -২০০৯).’নীল ময়ূরের যৌবন’ উপন্যাসের অনুবাদ। ঞৎধহংষধঃবফ ইু কধনরৎ ঈযড়ফিযঁৎু. ঋঁমরঃরাব পড়ষড়ঁৎং (২০১০)

পুরস্কার ও সম্মাননা
২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সন্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রিতে ভূষিত করে।[৮] অন্যান্য পুরস্কার ও সম্মাননার মধ্যে রয়েছে:

ড: মুহম্মদ এনামুল হক স্বর্ণপদক – ১৯৬৯
উপন্যাসে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার – ১৯৮০)
আলাওল সাহিত্য পুরস্কার – ১৯৮১
কামার মুশতারি স্মৃতি পুরস্কার – ১৯৮৭
ফিলিপস্ সাহিত্য পুরস্কার – ১৯৯৪
অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার – ১৯৯৪[৩]
ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক – ২০০৯[৯]
রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার – ২০১০
সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার – ২০১৮[১০]
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গ্রন্থ শাখায় পঙ্খিরাজ থেকে প্রকাশিত অপেক্ষা গ্রন্থের জন্য পাঞ্জেরী ছোটকাকু আনন্দ আলো শিশুসাহিত্য পুরস্কার – ২০১৯[১১]
ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার – ২০১৮[১২]
সার্ক সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫)

Show sidebar

No products were found matching your selection.