নিজামুল ইসলাম সরফী : নির্ভরযোগ্য সংস্কৃতিকর্মী ও লেখক

নিজামুল ইসলাম সরফী। আমার অন্যতম সহযোগী ছিলেন একসময়। যখন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও সাম্প্রতায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে আমরা সোচ্চার ভূমিকা পালন করছিলাম; প্রতিবাদী ছড়া সংকলন প্রকাশ ও প্রতিবাদী সমাবেশের আয়োজন করছিলাম, তখন নিজামুল ইসলাম সরফীরা আমাদের কাজকে এগিয়ে নিয়েছিলেন অসীম সাহসিকতায়। বঙ্গবন্ধু লেখক শিল্পী সম্মিলন পরিষদ গঠন এবং পরিষদের বিভিন্ন কর্মকা-ে তিনি সক্রিয় ছিলেন। এই সংগঠনের ব্যানারে নানা আয়োজনে যখন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিলাম, তখন তারাই ছিলেন আমাদের হাতের লাঠি। প্রতিকূল পরিবেশে আমাদের নির্ভরযোগ্য সহকর্মী নিজাম। তিনি সংস্কৃতিকর্মী ও প্রাবন্ধিক হিসেবে সমধিক পরিচিত।
বলা যেতে পারে, নিজামুল ইসলাম সরফী ছাত্রজীবন থেকেই নিবেদিত প্রাণ সংস্কৃতিকর্মী। নব্বই দশকে চট্টগ্রামে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে মাসব্যাপী যে একুশমেলা হতো সরফী ছিলেন তার অন্যতম সংগঠক। সে সময় চট্টগ্রামের সাংস্কতিক অঙ্গন জুড়ে যেসব অনুষ্ঠান হতো তিনি এসবের রিভিউ করতেন।
নিজামুল ইসলাম সরফীর জন্ম ১৯৭৪ সালের ৭ অক্টোবর, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার সরফভাটা গ্রামের সরফত আলী মুন্সী বাড়িতে। নিজামুল ইসলাম সরফী ১৯৯০ সালে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম সরকারী কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞানে বিবিএ সম্মানসহ এমবিএ মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। পলগসহ বেশকিছু সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত তিনি। তাঁর লেখা প্রথম প্রকাশিত হয় দৈনিক আজাদীর আগামীদের আসরে। ২০০৯ সালের একুশের বই মেলায় শৈলী প্রকাশন চট্টগ্রাম থেকে প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘বরণীয় তারা স্মরণীয় তারা’। এটি পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। দেশের বরেণ্য মনীষীদের জীবন ও কর্ম নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই এই গ্রন্থের অবতারণা।
তদানীন্তন দৈনিক আজাদীর সহকারী সম্পাদক সিদ্দিক আহমেদ গ্রন্থের ভূমিকাতে লিখেছেন- “সরফী সেই সময়ে দেশের কয়েকজন বিখ্যাত লোকের পরিচয়মূলক কিছু লেখা লেখেন। বস্তুত শিশু-কিশোরদের মনে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একটা ভাবমূর্তি তৈরীর প্রয়াস ছিল ছোট ছোট এই লেখাগুলোতে। এই বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে অনেকেই লিখেছেন। তাঁদের নিয়ে বড় বড় গ্রন্থও আছে। নিজামের লক্ষ্য ছিল শিশু-কিশোরদের মনে দেশের কয়েকজন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি এবং অনুসন্ধিৎসা জাগিয়ে তোলা। নিজাম তার ক্ষমতা অনুযায়ী সহজ ভাষায় ছোট ছোট জীবনী রচনা করেছেন। পড়তে সময় বেশি নেয় না। কিন্তু আলোচ্য ব্যক্তি সম্পর্কে একটা সহজ ধারণা দাঁড়িয়ে যায়। এ ধরনের একটা জীবনী গ্রন্থ অনেক বছর আগে এক বিখ্যাত ব্যক্তি লিখেছিলেন। বইটির নাম হলো আগে এক বিখ্যাত ব্যক্তি লিখেছিলেন। বইটির নাম হলো ঋরাব গরহঁঃবং ইরড়মৎধঢ়যু. বইটির লেখক ডেল কার্নেগীর উদ্দেশ্য ছিল পাঁচ মিনিট পাঠে তাঁর নির্বাচিত ব্যক্তি সর্ম্পকে যেন একটা মোটামুটি ধারণা তৈরী হয়। নিজামুল ইসলাম সরফীর লক্ষ্যও অনেকটা তাই। তারও কয়েকজন নির্বাচিত মনীষী আছেন। যেমন- অধ্যাপক আবুল ফজল, কবি নূর মোহাম্মদ চৌধুরী, ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, বিজ্ঞান সাধক ড. কুদরত-ই-খুদা, আবুল মনসুর আহমদ, সত্যজিৎ রায়, মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন, বেগম রোকেয়াঃ নারী জাগরণের পথিকৃতৎ, ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মুক্তিসংগ্রামে উৎসর্গিত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান, কবি জীবনানন্দ দাশ, শিশুসাহিত্যের রাজপুত্তুর উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী, বাউল গানের স¤্রাট লালন সাঁই, নজরুল যখন ছোট ছিলেন, অধ্যাপক আসহাবউদ্দিন আহমদ, মেজর নাজমুল হক, চৌধুরী আহমদ ছফা, মোহাম্মদ ইউনুস চৌধুরী প্রমুখ। তিনি তাদের কথাই সহজভাবে বলেছেন। দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে লেখা সংক্ষিপ্ত জীবনমালা অনেক বছর পর গ্রন্থবদ্ধ হয়ে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। এ গ্রন্থ প্রকাশের পর সরফী লেখলেখিতে আরো বেশি নিবিষ্ট হবেন তেমন প্রত্যাশা রাখি”।
বর্তমানে নিজামুল ইসলাম সরফী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত আছেন। আমরা তাঁর দীর্ঘ ও সুস্বাস্থ্য জীবন কামনা করছি।

Showing the single result

Show sidebar