তামাটে জাতির কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা
‘দরিয়ার পাশে বসে গুনছি দরিয়া
আমার আঙিনা থেকে কখনও সরিয়া
যাবে না সে সাফ কবলায়
যাবে না সে ভিন মহলায়
আমাকে সে করেছে দখল
আমি তাকে করেছি দখল
আমাদের দু’জনেরই আছে দলবল
সবাই মরিয়া যাবে দরিয়া যাবে না
দরিয়া সকলি খাবে, কবিকে খাবে না।’
কিংবা
‘রোদ্দুরে নিয়েছি আর বৃষ্টিতে বেড়েছি
সহস্র শতাব্দী দিয়ে নিজেকে গড়েছি
আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।’
দরিয়ানগরের কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, তামাটে জাতির কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। বাঙালি জাতিসত্তার কবি হিসেবে খ্যাত। গত শতকের ষাট দশক থেকে শুরু করে আজ অবধি যে ক’জন মেধাবী কবি বাংলা কাব্য-ভুবনকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন, তাঁদের মধ্যে কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা অন্যতম। কবি শামসুর রাহমানের ভাষায়, ‘গুরুত্বপূর্ণ কবি এবং ভালো কবি এক কথা নয়। আমি কবি মুহম্মদ নূরুল হুদাকে আমাদের দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি বলে মনে করি। ভালো কবি বেশ কয়েকজন হতে পারেন, তবে গুরুত্বপূর্ণ কবি আমার বিবেচনায় কম। এবং সেই বিরল কবিদেরই একজন মুহম্মদ নূরুল হুদা।’ শুধু কবি হিসেবে নয়, সাহিত্যের নানা শাখায় তিনি তাঁর মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, অনুবাদ, শিশুসাহিত্য- প্রায় প্রতিটি শাখায় তিনি স্বচ্ছন্দ। তিনি পালন করছেন কাব্য-আন্দোলনের প্রধান সংগঠকের ভূমিকাও। কবিতার নির্মাণশৈলীতে, বাক-প্রতিমায়, উপমা-উৎপ্রেক্ষায় এবং শব্দের অপরূপ চয়নে তিনি অনন্যসাধারণ। ছন্দ-মাত্রা-পর্বের ওজন মাপা গাণিতিক নিয়ম ব্যবহারের কারণে তাঁর কবিতার শরীরে সৃষ্টি হয় অপূর্ব ব্যঞ্জনা।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপনা দিয়ে। তারপর যোগ দেন বাংলা একাডেমিতে। ছিলেন নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক। বাংলা একাডেমির পরিচালক পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর, বিভাগীয় প্রধান ও মানবিক অনুষদের ডীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এখন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব ও বাংলাদেশ রাইটার্স কপিরাইট সোসাইটির সভাপতি। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, জন্মজাতি, তুমি যদি জালদাস আমি জালদাসি, আমরা তামাটে জাতি, স্বাধীন জাতির স্বাধীন পিতা, হুদা-কথা, হাজার নদীর দেশ, কবিতার ভবিষ্যৎ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, কবিতার কৌশল, জীবনানন্দ সেন ও অন্যান্য কবিতা প্রভৃতি।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। দেশের পাশাপাশি তিনি বিদেশ থেকেও পুরস্কার ও সম্মান এনেছেন নিজের জন্য, বাংলাদেশের জন্য, বাংলা সাহিত্যের জন্য।
No products were found matching your selection.