পিয়াল বাবা মায়ের নয় সন্তানের মধ্যে চতুর্থ। জন্ম ৩ জানুয়ারি ১৯৬৯।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মিশন স্কুলে ওর প্রাইমারি শিক্ষা শুরু। স্কুলের দিদিদের বিশেষ আদরের ছিলো পিয়াল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে মাধ্যমিক আর ব্রাহ্মণ্যবাড়িয়া সরকারী কলেজে উচ্য মাধ্যমিক পড়া শেষ করে কৃতিত্বের সাথে।
এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর ডিগ্রী লাভ করে।
বাংলা একাডেমির রিসার্চ ফেলো হিসেবে দুই বছর রিসার্চ করার পর বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয় তার গবেষণা গ্রন্থ “নৌকা বাইচ।”
এরপর ডারহাম বিশ্ববিদ্যাল, ইংল্যান্ড থেকে এনথ্রোপলজিতে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
চাইলে ইংল্যান্ড থেকে যেতে পারতেন, কিন্তু দেশের প্রতি অদম্য টানে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে তিনি স্কুল অব লিবারেল আর্টস এ ডীন পদে অধিষ্ঠিত হন। বিশ্ব বিদ্যালয়ের একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে তিনি তার সহকর্মীকে নিয়ে গত বছর ২৩শে এপ্রিল ইংল্যান্ডে যান। সেখানে পৌঁছে একটি হোটেল রুমে ঘুমের মধ্যেই তিনি অন্যলোকে চলে যান। তার আকস্মিক অন্তর্ধান হতবাক করে দেয় তার পরিবার পরিজন আর পরিচিত বলয়কে।
তার গায়কিতে এমন এক মায়া রয়েছে, যা আবিষ্ট করে লোকসংগীতপ্রেমী শ্রোতাদের। তার কণ্ঠের মায়ায় টের পাওয়া যায় মাটির সোঁদা গন্ধ, শেকড়ের তিনি একাধারে একজন কবি, লোক সংস্কৃতি গবেষক ও সংগীত শিল্পী। পেশাগত দায়িত্ব কাঁধে নিয়েও শেকড়ের সন্ধানে ছুটে যান গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। সংগ্রহ করেন মাটি ও মানুষের সহজিয়া জীবন দর্শন, প্রাণ থেকে উৎসারিত সুরের ধারা। শুধু তাই নয়; সংগীতের আনন্দ মন্দিরে ধ্যানস্থ হয়ে সেই সুর নিজের ভেতর ধারণ করে কণ্ঠে তুলে আনেন অবলীলায়। মাহবুব পিয়ালের লোকায়ত গানগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে প্রায় সারাদেশ থেকে। তাঁর গানের মাধ্যমেই নজরে আসে লালন, হাসন, আব্দুল করিম শাহ’র বাইরেও প্রচুর লোকগান, যা এ অঞ্চলের মরমী ভাবধারাকেই তুলে ধরে সংগীত পিপাসুদের সামনে। হারিয়ে যেতে দেয় না হারিয়ে যাওয়া আরো হাজারো গানের মতোন। সর্বশেষ প্রকাশিত অ্যালবাম ‘মনমনরা পাখি’ ছাড়াও এ পর্যন্ত তার লোকগানের আরো তিনটি এ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। দুহাজার আটে প্রকাশিত ‘কোন রঙ্গে ডাকরে’ তার প্রথম অ্যালবাম। এর পর দুহাজার নয় এ ‘ মেঘ রাজা’ আর দুহাজার দশ এ ‘গাঙ্গে নয়া পানি’।
ড. মাহবুব পিয়াল তরুন বয়স থেকেই লুপ্ত হয়ে যাওয়া লোক সংগীত সংগ্রহে ছুটে বেড়িয়েছেন সারা দেশ, খুজে বের করেছেন প্রাচিন প্রকাশনা থেকে অনেক হাড়িয়ে যাওয়া লোকগান, তার বিশাল অপ্রকাশিত সংগ্রহ থেকে কিছু বাছাই করা লোক সংগীতের নমুনা তিনি সরক্ষণ করেছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির আর্কাইভে।

তিনি তার সমমনা কয়েক জন লোকসংগীত প্রেমীদের নিয়ে গঠন করেন লোকসংগীতের ব্যান্ড “লোকরঙ”।বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ব্যান্ডটি সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়।

অইঈ রেডিওতে “হাওয়া বদল” নামের অনুষ্ঠানে একটানা পাঁচ বছর কাজ করে গেছেন। তুলে ধরেছেন বাংলার লোকজ গানের আদি অকৃত্রিম কথা ও সুর।
স্কুল জীবন থেকেই তার কবিতা লিখা শুরু।
তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো- দামোদর, নদীশ্রুতি, হাওরের হাওয়া, জলযাত্রা।তার সর্বশেষ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ স্মৃতির ভ্রমণ।
এছাড়াও মাহবুব পিয়াল খড়পধষ ভইচে( অহ রহঃবৎহধঃরড়হধষ লড়ঁৎহধষ ড়ভ ষড়পধষ / ওহফরমবহড়ঁং কহড়ষিবফমব ড়ভ ফবাবষড়ঢ়সবহ) নামে একটা জার্ণালের এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন সুনিপুন ভাবে।

তার অকাল প্রয়াণ এক বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি করেছে তার পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে আর শিল্পাঙ্গনে।
ছোটবেলা থেকেই পিয়াল ছিলো অন্য রকম, সবার থেকে আলাদা। অসম্ভব সাহিত্যপ্রেমী, সংগীত প্রেমী বিশেষ করে রবীন্দ্র সংগীত। পরবর্তীতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরেছে, হাওড়ে বাওড়ে ঘুরে বেরিয়েছে লোকগান সংগ্রহে। লোকগান সংগ্রহই নয় গানকে আত্মায় ধারণ করেছে, সবাইকে গেয়ে শুনিয়েছে। এই ঘুরে ঘুরে গান সংগ্রহের সাথে সাথে সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা, তাদের আনন্দ উৎসব, তাদের বিনোদনের উপাদান গুলো পিয়ালের কবিতায় ফুটে ওঠেছে।
স্মৃতির ভ্রমণ হয়ে ওঠে এক অনাবিল সুন্দর ভ্রমণ পিয়ালের স্মৃতির ঝাঁপির।
পিয়ালের বইটাতে যে কবিতা গুলো স্থান পেয়েছে, ও বেঁচে থাকলে হয়তো আজ নিজেই প্রকাশ করতো বই। এখন আমরা পিয়ালের ভাইবোনেরা যারা এখনো পিয়ালের প্রস্থান মেনে নিতে পারিনি, অপ্রকাশিত কবিতা গুলো সংগ্রহ করে বইটি এবারের বই মেলায় প্রকাশ করার প্রয়াস করেছি।

Show sidebar

No products were found matching your selection.