অরুণ শীল : কিশোরকবিতা আন্দোলনের অগ্রসেনানী
বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে অরুণ শীল এক অনিবার্য নাম। সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ধারার সাহিত্য রচনায় তিনি ক্রিয়াশীল। ছোটোদের মনের মতো সাহিত্য সৃষ্টি করে তিনি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। সাহিত্যের নানা শাখায় তাঁর বিচরণ। লিখেছেন ছড়া, লিখেছেন কবিতা, গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ প্রভৃতি। তাঁর ছড়া শুধু ছোটোদের নয়, বড়দের চোখ-কান-মগজকে তৃপ্ত করে। তবে তাঁর কবিতাগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। বলা যেতে পারে-কিশোরকবিতা রচনায় অরুণ শীল সিদ্ধহস্ত। রচনাশৈলীর বৈচিত্র্যে, আঙ্গিক বিন্যাসে ও স্বাতন্ত্র্যে সেগুলো পরম উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। এ পর্যন্ত অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। তন্মধ্যে রয়েছে, মেঘের দেশে আলোর ঘোড়া, সাদা মেঘের সাকো, চাঁদের বুড়ি ওড়ায় ঘুড়ি, মেঘ তাড়–য়া, মেঘ উড়ে যায় বন পাহাড়ে, আয়রে সকাল আয়, রোদের বাড়ি যাব, নির্বাচিত কিশোরকবিতা, ১০০ কিশোরকবিতা, পড়ছি পাখির খাতা, পদ্মপরি ও পালোয়ান প্রভৃতি। ছোটোদের কথা অত্যন্ত গভীরভাবে ভেবে আন্তরিকতার সঙ্গে সৃষ্টি করেছেন উপর্যুক্ত রচনাবলি। শিশু-কিশোর মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণে তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবি রাখে। অরুণ শীলকে আমরা বলতে পারি একজন সমাজসচেতন দায়িত্বশীল শিশুসাহিত্যিক। ছোটোদের মনের মত করে সহজ সরল ছন্দে, দৃশ্যময় ভাষায় তিনি রচনা করেছেন অপূর্ব সব কবিতা। স্বভাবের স্বাতন্ত্র্যে ও চরিত্রের সহজবোধ্য প্রকাশে তিনি জয় করেছেন ছোটোদের মন। কখনো ছড়ার গতিময় ছন্দে, কখনো ভাবগম্ভীর ব্যক্তিত্বে, আবার কখনো খেয়াল খুশির ভঙ্গিতে এগিয়ে নিয়েছেন তাঁর কবিতার শরীর। তাঁর ভাষা যেমন সহজ ও প্রাঞ্জল, প্রকাশভঙ্গি তেমনি সাবলীল। কিশোর কবিতাই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। নতুন আঙ্গিক, নতুন বিষয় ও নতুন ধারায় কবিতা রচনার প্রতি রয়েছে তাঁর বিশেষ ঝোঁক। প্রাণোচ্ছল ছন্দ ও সাজ কুশলতা দিয়ে তিনি কিশোরকবিতার গতিকে বাঙ্গময় করে তোলেন। চলার ভঙ্গির সঙ্গে বলার ভঙ্গিকে মিলিয়ে নেন সহজভাবে। তাঁকে বলা যায় বাংলাদেশের কিশোরকবিতা আন্দোলনের অগ্রসেনানী।
পেশায় ব্যাংকার অরুণ শীল একজন দক্ষ সংগঠকও। পালন করছেন চট্টগ্রাম একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব। স্বকাল শিশসাহিত্য সংসদের পরিচালক ছাড়াও নানা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তিনি।