কেশব জিপসী : যাঁর সমস্ত কবিতা সংগীতমুখী

সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুসাহিত্যও বিকশিত হয়েছে। প্রচুর কর্মী কাজ করছেন। বলতে গেলে আমাদের ‘শিশুসাহিত্য’ এখন কম সমৃদ্ধ নয়। বরং কালের আবর্তে শাখাটি অনেক বেশি সমৃদ্ধ হয়েছে বলা যায়। বর্তমানে যারা শিশু-কিশোর উপযোগী সাহিত্য রচনা করছেন তাদের মধ্যে অনেক খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক রয়েছেন, যারা অত্যন্ত মেধাবী ও নিষ্ঠাবান। তারা যেমন সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করছেন, তেমনি পাঠকপ্রিয়তাও পেয়েছেন। তাঁদের একজন কেশব জিপসী। পরপর চারটি কিশোর কবিতার বই উপহার দিয়ে তিনি এক দায়িত্বশীল ও প্রতিভাবান লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। বইগুলো হলো : ‘স্বপ্নবোনা মানিকসোনা’, ‘যুদ্ধে গড়া পদ্যছড়া’, ‘খুশির সীমা নাই’ এবং ‘পায়রা ওড়ে রঙিন ভোরে’। সবকটি কবিতা লিখেছেন স¯েœহে, সযতেœ। লেখাগুলোর বিশেষত্ব হলো ছোটো বড় সকলেই তাঁর লেখা পছন্দ করেন। ছোটোদের মনের নানান সূক্ষ্ম ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলো তিনি গভীরভাবে অনুধাবন করেছেন। তাদের আবেগ-অনুভূতি, আশা-আকাক্সক্ষা, ভাবনা-চিন্তা, কল্পনাগুলি অনুভব করেছেন অন্তর দিয়ে। ফলে তাঁর রচনায় আমরা প্রত্যক্ষ করি তার সুন্দর ও সহজ প্রতিফলন।

কেশব জিপসীর রচনা শিশুর মানস গঠনে ভূমিকা পালনে সক্ষম। ছোটদের রুচি গঠন ও মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সহায়ক এমন রচনাই আমাদের কাম্য। আমরা জানি, মানুষের সৌন্দর্যবোধ ও আনন্দানুভূতির মূলে রয়েছে তার রুচি। এই রুচিকেই সবার আগে প্রাধান্য দেওয়া দরকার। কামিনী রায় বলেছেন, ‘কুসাহিত্য, কু-দৃশ্য মানুষের রুচিকে বিকৃত করে। সাহিত্য যখন ভবিষ্যৎ সমাজের জীবনকে গঠন করে তখন এরূপ কু-সাহিত্যিককে উৎসাহ না দেওয়াই উচিত। যাহা সুন্দর, যাহা আনন্দদায়ক, যাহা জনকে ঊর্ধ্বমুখ করে, তাহাই আর্ট।’ বলতে দ্বিধা নেই, কেশব জিপসীর কবিতাগুলো আসলে সু-সাহিত্য এবং শিল্পরুচিসম্পন্ন। দেশ, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা-আন্দোলন ও প্রকৃতিবিষয়ক কবিতায় তিনি অধিক মনোযোগী ও আন্তরিক। একটা লেখার উদাহরণ দেই :

উঠেছিল উজ্জ্বল এ দেশের প্রান্তে
নুতন সূর্য এক স্বাধীনতা আনতে।
এঁকেছিল সূর্যটা সবুজের বক্ষে
স্বাধীনতা আনবার অদম্য লক্ষ্যে।

শান্ত সুবোধ জাতি উঠেছিল গর্জে
মৃত্যু তুচ্ছ করে তুলেছিল ঝড় যে।
ভেঙ্গেছিল শত্রুর নিষ্ঠুর গর্ব
করেছিল দম্ভের অহমিকা খর্ব।

শোষণের গ্রাস থেকে পেয়েছিল মুক্তি
বুকে নিয়ে মুজিবের ডাক দেয়া উক্তি।
বন্ধু তিনিতো আজ মহিমার শীর্ষে,
তাঁর ছিল দৃঢ়তায় উন্নত শির যে।

হয় না তুলনা তাঁর তাই কারো সঙ্গে
ধন্য আমার আমি জন্মেছি বঙ্গে।
[ধন্য আমি / কেশব জিপসী]

কেশব জিপসী কেবল নিষ্ঠাবান ছড়াকার ও কিশোরকবিতার অনন্য রূপকার নন, তিনি লব্ধপ্রতিষ্ঠিত একজন সংগীতশিল্পীও। ফলে তাঁর সমস্ত কবিতা সংগীতমুখী। প্রকাশ করেছেন গীতিআলেখ্যগ্রন্থ ‘কথার ভেলা গানের মেলা’। তাঁর জন্ম ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬০, সীতাকু-ের শীতলপুরে। সত্তরের দশকের শেষের দিকে লেখালেখিতে আগমন। আজাদীর মাধ্যমে। ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত সজ্জন, রুচিবান গুণী এই মানুষটা একজন সংগঠকও, নানা সংগঠনের সঙ্গে তিনি যুক্ত আছেন।

Show sidebar

No products were found matching your selection.