ড. অনুপম সেন : আমাদের প্রগতিশীল ধারার বিবেকী কণ্ঠস্বর

ড. অনুপম সেন আমাদের এই জনপদের অগ্রগ্য অনন্যসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব। দেশের প্রথম সারির একজন বুদ্ধিীজীবী। কি পা-িত্য, কি গবেষণা, কি শিক্ষা, কি দর্শন, কি রাজনীতি, কি সংস্কৃতি, কি সাহিত্য- প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। প্রতিটি বিষয়ে তিনি সমান ওয়াকিবহাল। সব বিষয়ে যথেষ্ট পড়াশোনা আর দক্ষতা আছে বলেই যে কোনো সভা-সমাবেশে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তিনি তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
ড. অনুপম সেন একজন নির্লোভ, নিঃস্বার্থ মানুষ, জ্ঞানী মানুষ, এরকম মানুষ সমাজে বিরল। সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান করেও তিনি পায়ে দলে গেছেন সব রকমের লোভ-লালসার ভিত্তি, উপেক্ষা করেছেন যাবতীয় হাতছানি। স্বার্থ আর কোনো পদের জন্য তিনি তাঁর শ্রম ও সময় দেননি, সময় দিয়েছেন নিজেকে পবিত্র ও নির্মল রাখতে।
ড. অনুপম সেন সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিত্ব। আওয়ামী রাজনীতি ও রাজনৈতিক দর্শনের অধিকারী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়েও তিনি পরমতসহিষ্ণু এক বটবৃক্ষ। আপাদমস্তক তিনি অসাম্প্রদায়িক। সব শ্রেণীর, সব ধর্মের মানুষের প্রতি তাঁর রয়েছে মমত্ববোধ। উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ বলতে যা বোঝায় – ড. অনুপম সেন তা’ই। তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা, পরমতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং জ্ঞান ও পা-িত্য তাঁকে মহীরূহ করে তুলেছে, করে তুলেছে সর্বজন শ্রদ্ধেয়।

দেশের নানা উত্থান-পতন, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে তিনি পালন করেছেন অগ্রণী ভূমিকা। তিনি আমাদের প্রগতিশীল ধারার বিবেকী কণ্ঠস্বর।
অনুপম সেনের জন্ম ৫ আগস্ট ১৯৪০, চট্টগ্রাম মহানগরীতে এক বৈদ্যব্রাহ্মণ পরিবারে। তার গ্রামের বাড়ি পটিয়া উপজেলার অন্তর্গত ধলঘাট গ্রামে। তিনি খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন। চট্টগ্রাম একাডেমির চেয়ারম্যান। ২০১৪ সাল শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন।

ড. সেনের তত্ত্বাবধানে বা সুপারভিশনে বেশ কয়েকজন গবেষক বিভিন্ন বিষয়ে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি পি.এইচ.ডি গবেষণা কর্মের পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখনও তার তত্ত্বাবধানে বেশ কিছু গবেষণাকর্ম পরিচালিত হচ্ছে।

ড.অনুপম সেন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হন। তিনি ১৯৮৪-৮৫ এবং ২০০০-২০০১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং ১৯৮৪-৮৫ সালে বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিভূ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি-ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৬ সালে ড.অনুপম সেন শ্রীমতি উমা সেনগুপ্তার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের একমাত্র মেয়ে ইন্দ্রানী সেন গুহ।
অধ্যাপক অনুপম সেন সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও বাংলা সাহিত্য-বিষয়ে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন।
তন্মধ্যে রয়েছে : দি পলিটিক্যাল ইথিকস অব পাকিস্তান : দেয়্যার রুল ইন পাকিস্তানস ডিসইন্টিগ্রেশন, বাংলাদেশ : রাষ্ট্র ও সমাজ; ব্যক্তি ও রাষ্ট্র : সমাজ-বিন্যাস ও সমাজ-দর্শনের আলোকে; আদি-অন্ত বাঙালি : বাঙালি সত্তার ভূত-ভবিষ্যৎ; বাংলাদেশ : ভাবাদর্শগত ভিত্তি ও মুক্তির স্বপ্ন; কবি-সমালোচক শশাঙ্ক মোহন সেন; বাংলাদেশ : ভাবাদর্শগত ভিত্তি ও মুক্তির স্বপ্ন; বিলসিত শব্দগুচ্ছ (প্রতীচী ও প্রাচ্যের কয়েকটি কালজয়ী কবিতার অনুবাদ); জীবনের পথে প্রান্তরে;
সুন্দরের বিচার সভাতে; ইতিহাসে অবিনশ্বর; বাংলাদেশ ও বাঙালি : রেনেসাঁস, স্বাধীনতা-চিন্তা ও আত্মানুসন্ধান; বাঙালি-মনন, বাঙালি-সংস্কৃতি : সাতটি বক্তৃতা; বিচিত ভাবনা প্রভৃতি। ‘অনন্য আলোকরেখা’ নামে তাঁকে নিয়ে একটি অসাধারণ সম্মাননা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। এটি সম্পাদনা করেছেন আলী প্রয়াস।

Showing all 5 results

Show sidebar