সনজিত দে : কিশোরকবিতায় যিনি নিবেদিত ও সপ্রাণ
সনজিত দে বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে পরিচিত নাম। সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় বিচরণ করলেও ছড়া ও কিশোরকবিতায় তিনি বেশি নিবেদিত ও সপ্রাণ। দীর্ঘদিন ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে লেখালেখি করে তিনি অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, কিশোরকবিতা রচনায় সনজিত অধিকতর স্বতঃস্ফূর্ত। কিশোরদের মনের মত করে সহজ সরল ছন্দে, দৃশ্যময় ভাষায় তিনি রচনা করেছেন অপূর্ব সব কবিতা। স্বভাবের স্বাতন্ত্র্যে ও চরিত্রের সহজবোধ্য প্রকাশে তিনি জয় করেছেন পাঠকের মন। কখনো গতিময় ছন্দে, কখনো তন্দ্রাময় গতিতে, আবার কখনো খেয়াল খুশির ভঙ্গিতে এগিয়ে নিয়েছেন তাঁর কবিতার শরীর। তাঁর ভাষা যেমন সহজ ও প্রাঞ্জল, প্রকাশভঙ্গি তেমনি সাবলীল। বিষয়-বৈচিত্র্য, শব্দ-কুশলতা, ছন্দ-নৈপুণ্য ও আঙ্গিক-বিশ্লেষণসহ নানা দিকে নতুন কিছু সৃষ্টির উন্মাদনায় তিনি সচেষ্ট। প্রকৃতি-ঘনিষ্ট কবিতা রচনায় তিনি অধিক মনোযোগী। প্রকৃতির সঙ্গে কিশোরের ভাব ও আকুতি এবং প্রকৃতির অনাবিল মায়ার কথা তিনি তুলে ধরেন নানা লেখায়। যেমন :
আমের বাগানে ফুলেরা কীভাবে
হেলেদুলে খুব নাচে
ডালে ডালে ছোটো মুকুলেরা হাসে
ডেকে নিয়ে যায় কাছে ।
বলল আমাকে শালিকের ছানা
মুকুল ছিঁড়ো না ভাই
আমরা পাখিরা এইটুকু শুধু
তোমাদের কাছে চাই।
ফল তুমি খাবে, এ ফল যখনি
পরিপূর্ণতা পাবে
পৃথিবীর সব নিয়মের চাকা
চালু হয় এইভাবে।
সত্যি বলেছে শালিকের ছানা
আমরা জানি না কিছু
অঙ্কুর ছিঁড়ি আম জাম আতা
কাঁঠালের মুচি, লিচু।
আমরা যা খাই তার চেয়ে বেশি
নষ্ট করি যে কতো
একটুকু যদি ভাবতাম হায়
শালিক ছানার মতো?
পেছনে রয়েছে অনেক অজানা
জানতে চেয়েছি তা কি ?
চোখ খুলে দিল আজকে আমাকে
একটা শালিক পাখি ।
[অনেক অজানা]
সনজিত দে’র অনেকগুরো বই প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে রয়েছে : স্বপ্নমাখা ভোর, ডানাঅলা ঘুড়ি, ঘড়ির কাঁটায় রৌদ্র হাঁটে, সিংহ রাজার মন্ত্রী শেয়াল, স্বপ্নলোকের চাবি, আমি যে এক নদী, মাঠের পরে সবুজ শাড়ি প্রভৃতি।
সনজিত দে’র কাব্যভাবনা ও লেখনী শক্তির প্রতি আমার অনুরাগ অনেক দিনের। তিনি লেখার মাধ্যমে সুখী-সমৃদ্ধ ও সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন।
সনজিত দে’র জন্ম ২৮ জুন ১৯৬৮, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে।