গবেষক মুহাম্মদ শামসুল হক : ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি যাঁর রয়েছে দায়বোধ

মুহাম্মদ শামসুল হক এক পরিশ্রমী গবেষক, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক। তাঁর গবেষণার বিষয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু। তাঁর মূল লক্ষ্য ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা, লেখালেখি ও গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস সচেতন করার কাজে অবদান রাখা। মূলত ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি দায়বোধ থেকে তাঁর কর্মে ও লেখায় প্রাধান্য পেয়েছে ইতিহাস-আশ্রয়ী বিষয়। সেই ইতিহাসেরই অনুষঙ্গ হিসেবে তাঁর প্রিয় বিষয় মুক্তিযুদ্ধ। প্রসঙ্গত ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৬ এপ্রিল পটিয়ায় পাকিস্তানি বাহিনীর বোমা হামলায় মুহাম্মদ শামসুল হকের মেঝো ভাই আমিনুল হক শহীদ হন।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আফসান চৌধুরী বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা খুবই কম হয়েছে। যা হয়েছে তা হল কেউ হয়ত তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। অথবা কেউ হয়ত তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা থেকে লিখেছেন। আবার কেউ কেউ নিজের স্মৃতিকথা লিখেছেন। বীরত্বগাথা লিখেছেন। এগুলো গবেষকদের কাজে লাগতে পারে। ইতিহাসের জন্য প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু এগুলো তো গবেষণা বা ইতিহাস নয়। মুক্তিযুদ্ধর ওপর আমাদের হয়ত ১০ হাজার বই হয়ে গেছে। তার মধ্যে আমি বলবো সাড়ে ৯ হাজার বইকে আমরা গবেষণামূলক বই বলতে পারব না। এছাড়া বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে আমাদের ইংরেজি এবং আরো অনেক ভাষায় মুক্তিযুদ্ধের বই প্রয়োজন। আমার হিসেবে ইংরেজিতে বইয়ের সংখ্যা ০ দশমিক ৫ ভাগ।’

আমি মনে করি মুহাম্মদ শামসুল হকের গবেষণা কর্ম অত্যন্ত শ্রমসাধ্য, তথ্যনির্ভর, ইতিহাসলব্ধ ও গ্রহণযোগ্য। তাঁর এক একটা গ্রন্থ মুক্তিযুদ্ধের এক একটা দলিল। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু : প্রামাণ্য দলিল, ১৯৯৬; স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি ও বেতার ঘোষণার ইতিবৃত্ত, ১৯৯৯, দ্বিতীয় সংস্করণ ২০০০; চোখে দেখা ৭১Ñ প্রথম পর্ব, ২০০৫; স্বাধীনতার সশস্ত্র প্রস্তুতি : আগরতলা মামলার অপ্রকাশিত জবানবন্দি, ২০০৯, দ্বিতীয় সংস্করণ ২০১২; খ্যাতিমানদের নানা রঙের দিনগুলি, ২০১১; স্বাধীনতার বিপ্লবী অধ্যায়Ñবঙ্গবন্ধু ও অন্যান্য ৪৭-৭১, ২০১৬, ২০১৯; স্বাধীনতার সশস্ত্র প্রস্তুতি ও বঙ্গবন্ধুÑআগরতলা মামলার অপ্রকাশিত জবানবন্দি (নতুন) ২০১৮; ৪৪ প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে দেখা ৭১ Ñদ্বিতীয় পর্ব, ২০১৮; চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সঙ্গীরা, ২০২০; একাত্তরের শোকগাথা, ২০২০; যুক্তি তথ্য-প্রমাণ প্রেক্ষাপট: বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষক, ২০২০।
মুহাম্মদ শামসুল হক ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে অধুনালুপ্ত দৈনিক জমানার মাধ্যমে সাংবাদিকতার শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে দৈনিক স্বাধীনতা, নয়াবাংলা, আল আমিন, সাপ্তাহিক চট্টলা, ভোরের কাগজ ইত্যাদি পত্রিকায় সহসম্পাদক, সম্পাদকের সচিব, প্রধান সমন্বয়ক, স্টাফ রিপোর্টার, বার্তা সম্পাদক, প্রদায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন। ১৯৯৮ সালে প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগদান। পরে সহসম্পাদক এবং ২০০৩ থেকে ২০১৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ইতিহাসের খসড়া নামে ইতিহাস ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণামূলক সাময়িকীর সম্পাদক ও প্রকাশক।
মুহাম্মদ শামসুল হক নানা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তন্মধ্যে রয়েছে পটিয়া কুসুম কলি আসর, শাপলা কুঁড়ির আসর, পটিয়া সাহিত্য পরিষদ, আমরা কজন সচেতন, মালঞ্চ সচেতন সাহিত্যগোষ্ঠী, পটিয়া বর্ণরেখা খেলাঘর আসর, দক্ষিণ জেলা খেলাঘর, পটিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদ। বর্তমানে সহসভাপতি, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী, কেন্দ্রীয় কর্মপর্ষদ ও সভাপতি, চট্টগ্রাম জেলা কমিটি।

Show sidebar

No products were found matching your selection.